পরিবেশগত দায়িত্ব ও ইসলাম

ইসলামে পরিবেশ সংরক্ষণ ও তার সঠিক ব্যবহারের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কুরআন ও হাদিসে এমন অনেক নির্দেশনা রয়েছে যা মানুষকে পরিবেশের যত্ন নেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ইসলামের শিক্ষায় পরিবেশগত দায়িত্বকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সৎ কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। নিচে এ বিষয়ে কিছু মূল দিক আলোচনা করা হলো:

১. আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে পৃথিবীর যত্ন নেওয়া

ইসলামে বিশ্বাস করা হয় যে, পৃথিবীর প্রতিটি উপাদান আল্লাহর সৃষ্ট এবং তা মানুষকে দান করা হয়েছে যত্নসহকারে ব্যবহারের জন্য। কুরআনে বলা হয়েছে, "আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রতিটি কিছুর উপর ভারসাম্য রেখেছেন" (সূরা আর-রহমান, আয়াত ৭-৯)। এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা মানুষের দায়িত্ব।

২. অপচয় ও দূষণের নিষেধাজ্ঞা

কুরআনে অপচয় থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে: "নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই" (সূরা আল-ইসরা, আয়াত ২৭)। পরিবেশকে দূষিত করা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করা অপচয় এবং এটি ইসলামের শিক্ষার পরিপন্থী।

৩. গাছপালা ও প্রাণীর যত্ন নেওয়া

হাদিসে গাছ লাগানো এবং গাছের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি একটি গাছ লাগায়, তারপর সেই গাছের যত্ন নেয় এবং তার ফলভোগ করে, সেই গাছ লাগানোর জন্য সে সাওয়াব লাভ করে” (সহীহ বুখারী)। এমনকি রাসুল (সা.) বলেছেন, "যদি কেয়ামতের দিনও আসে এবং তোমার হাতে একটি চারা গাছ থাকে, তা হলে সেটি রোপণ করো।"

৪. পানি ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ

ইসলামে পানির সঠিক ব্যবহার এবং অপচয় না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "তোমরা পানি অপচয় কোরো না, যদিও তা নদীর তীরে হয়" (ইবনে মাজাহ)। পানি এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ।

৫. প্রাণীদের প্রতি সহানুভূতি

ইসলামে প্রাণীদের প্রতি দয়া দেখানো এবং তাদের অধিকার রক্ষার উপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এক হাদিসে বলা হয়েছে, "একজন মহিলা একটি বিড়ালের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের জন্য জাহান্নামে যাবে।" অন্যদিকে, একজন ব্যক্তি একটি কুকুরকে পানি পান করানোর জন্য জান্নাতে গিয়েছিলেন।

৬. পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা

ইসলাম প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে উৎসাহিত করে এবং পৃথিবীর সম্পদকে অবিবেচকের মতো ব্যবহার না করার কথা বলে। এটি পৃথিবীকে আগামী প্রজন্মের জন্যও সুরক্ষিত রাখতে অনুপ্রাণিত করে।

 

ইসলামিক শিক্ষার ভিত্তিতে পরিবেশগত দায়িত্ব পালন করা মানুষের মৌলিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা, পানি সংরক্ষণ, গাছপালা রোপণ এবং প্রাণীদের প্রতি দয়াশীল হওয়া ইসলামের মূল নির্দেশনার অংশ। এটি স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করে যে, পরিবেশের প্রতি যত্ন নেওয়া ইসলামিক জীবনযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।


Post a Comment

Previous Post Next Post