ইসলাম ধর্ম মূলত শান্তি, সহনশীলতা এবং মানবতার প্রতি শ্রদ্ধার উপর প্রতিষ্ঠিত। সন্ত্রাস এবং সহিংসতা ইসলামের মূল শিক্ষার পরিপন্থী। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিরুদ্ধে এবং মানবিক মূল্যবোধের পক্ষে। নিম্নে এ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:
১. কোরআনের দৃষ্টিভঙ্গি
কোরআন শরীফে শান্তি, সহনশীলতা এবং মানবতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধার কথা বহুবার বলা হয়েছে।
- শান্তির আহ্বান: "ধর্মের বিষয়ে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই।" (সূরা বাকারা, ২:২৫৬) এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে ইসলাম ধর্মের বিস্তারে জোর-জবরদস্তি করার অনুমতি দেয় না।
- জীবন রক্ষার গুরুত্ব: "যে ব্যক্তি কোনো প্রাণকে হত্যা করে, সে যেন সমস্ত মানবজাতিকে হত্যা করল; আর যে ব্যক্তি কোনো প্রাণকে বাঁচায়, সে যেন সমস্ত মানবজাতিকে বাঁচাল।" (সূরা মায়েদা, ৫:৩২) এই আয়াত থেকে জীবনের মূল্য স্পষ্ট হয় এবং নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করার কঠোর নিন্দা করা হয়েছে।
২. হাদিসের দৃষ্টিভঙ্গি
হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর হাদিসেও শান্তি, সহানুভূতি এবং সহনশীলতার প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে।
- শান্তির প্রচার: "মুসলিম সেই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।" (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১০) এই হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে প্রকৃত মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার দ্বারা অন্য মানুষ নিরাপদ থাকে।
- সহানুভূতি: "তোমরা পৃথিবীর অধিবাসীদের প্রতি দয়া করো, তাহলে আকাশের অধিপতি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।" (সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯৪১) এই হাদিসে মানবিক দয়ার গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে।
৩. ইসলামী আইনের দৃষ্টিভঙ্গি
ইসলামী আইন (শরিয়া) সন্ত্রাস এবং সহিংসতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে।
- জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের শাস্তি: নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা বা আতঙ্ক সৃষ্টি করা ইসলামী আইন অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ এবং এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
- ন্যায়বিচার: ইসলামী আইন অনুযায়ী, বিচারব্যবস্থা এবং আইন প্রয়োগে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য।
৪. ইসলামের ইতিহাসে সহনশীলতার উদাহরণ
ইসলামের ইতিহাসে সহনশীলতা এবং শান্তির অনেক উদাহরণ রয়েছে।
- মদিনা সনদ: মদিনায় হিজরতের পর হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে শান্তি ও সহাবস্থানের জন্য একটি সনদ তৈরি করেছিলেন, যা মদিনা সনদ নামে পরিচিত। এটি মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে শান্তি ও সহযোগিতার একটি অনন্য উদাহরণ।
- মক্কা বিজয়: মক্কা বিজয়ের সময় হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর শত্রুদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি, যা ইসলামের সহনশীলতার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
৫. আধুনিক ইসলামী স্কলারদের দৃষ্টিভঙ্গি
আধুনিক ইসলামী স্কলারগণও সন্ত্রাস এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন।
- ফতোয়া: বিভিন্ন ইসলামী স্কলার এবং প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছেন, যা স্পষ্ট করে যে সন্ত্রাসবাদ ইসলামের বিরুদ্ধে।
- শান্তি প্রচার: আধুনিক স্কলারগণ শান্তি, সহনশীলতা এবং মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
ইসলাম একটি শান্তিপূর্ণ ধর্ম যা সন্ত্রাস এবং সহিংসতার বিপক্ষে। ইসলামের মূল শিক্ষা হল শান্তি, সহনশীলতা এবং মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা। ইসলামী আইন, কোরআন ও হাদিস, এবং ইসলামের ইতিহাস সকলই এ বিষয়টি সমর্থন করে যে ইসলাম সন্ত্রাস এবং সহিংসতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে। ইসলামের এই দৃষ্টিভঙ্গি মানবতার কল্যাণে এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
