ক্রিপ্টোকারেন্সি ইসলামের দৃষ্টিতে একটি নতুন এবং বিতর্কিত বিষয়। ইসলামী অর্থনীতি ও শরিয়াহ আইন অনুযায়ী, কোনো কিছু হালাল বা হারাম কিনা তা নির্ধারণের জন্য কয়েকটি মূলনীতি রয়েছে, যেমন ন্যায্যতা, সুদমুক্ত লেনদেন, এবং জুয়া বা অজানা ঝুঁকি (ঘারার) থেকে মুক্ত থাকা।
১. ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রকৃতি:
ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো একটি ডিজিটাল মুদ্রা, যা ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা কর্তৃপক্ষ ছাড়াই লেনদেন করা সম্ভব।
এতে সরাসরি অর্থাৎ এক ব্যক্তির থেকে আরেক ব্যক্তির কাছে মুদ্রা প্রেরণ করা যায়। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেনও করা যায়, যা ঐতিহ্যবাহী ব্যাংকিং সিস্টেমের বিকল্প হতে পারে।
২. ইসলামের অর্থনৈতিক নীতিমালা:
রিবা (সুদ): সুদ গ্রহণ করা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারে কোনো সুদ যদি জড়িত না থাকে, তবে এটির ব্যবহার হালাল হতে পারে।
ঘারার (অনিশ্চয়তা): যেকোনো লেনদেন, যেখানে ঝুঁকির মাত্রা বেশি বা ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত থাকে, তা ইসলামে নিষিদ্ধ। ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য অনেক সময় খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়, যা এই ঘারারের মধ্যে পড়ে।
মাইসির (জুয়া): জুয়া ও ঝুঁকি (স্পেকুলেশন) সম্পূর্ণ হারাম। অনেক লোক ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে শুধু মূল্য বাড়ার আশায় বিনিয়োগ করে, যা জুয়ার মতো হতে পারে।
৩. ফতোয়া ও মতামত:
পক্ষসমর্থন: অনেক আলেম মনে করেন, যদি ক্রিপ্টোকারেন্সি সুদের সাথে যুক্ত না থাকে এবং তা জুয়া বা ঝুঁকিমূলক লেনদেনের জন্য ব্যবহার না হয়, তাহলে এটি হালাল হতে পারে। তারা এটিকে একটি নতুন ধরনের মুদ্রা হিসেবে বিবেচনা করেন।
বিরোধিতা: অন্যদিকে, কিছু আলেম মনে করেন, ক্রিপ্টোকারেন্সির উচ্চ ঝুঁকি, অস্পষ্টতা, এবং এর মূল্য পরিবর্তনের অস্থিরতার কারণে এটি হারাম হতে পারে। তারা এটিকে ঘারার এবং মাইসিরের সাথে তুলনা করে থাকেন।
৪. সিদ্ধান্ত:
ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে, ক্রিপ্টোকারেন্সি হালাল হতে পারে যদি তা:
সুদমুক্ত হয়,
ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা (ঘারার) কম থাকে,
এবং তা লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়, বিনিয়োগের উপকরণ হিসেবে নয়।
তবে, বিষয়টি নিয়ে ইসলামী স্কলারদের মধ্যে এখনও ভিন্নমত রয়েছে। তাই, এ বিষয়ে একজন বিশ্বস্ত ইসলামী স্কলারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
