ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে: সহজ ব্যাখ্যা



আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেট অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন ইন্টারনেট আসলে কীভাবে কাজ করে? আমরা যখন ইমেইল পাঠাই, ভিডিও দেখি বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি, তখন সবকিছু ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়। এই ব্লগ পোস্টে আমরা ইন্টারনেটের কাজের পদ্ধতি নিয়ে সহজভাবে আলোচনা করব।
 

 ইন্টারনেট কী?

ইন্টারনেট হল একাধিক সংযুক্ত কম্পিউটার এবং ডিভাইসের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক, যা আমাদের একে অপরের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করতে সাহায্য করে। এটি একটি বৈশ্বিক সিস্টেম, যা পৃথিবীর যেকোনো স্থানে দ্রুত তথ্য প্রেরণ এবং গ্রহণের সুবিধা দেয়।

ইন্টারনেট শব্দটি এসেছে "ইন্টারকানেকটেড নেটওয়ার্কস" (Interconnected Networks) থেকে, যা বোঝায় একাধিক ছোট ছোট নেটওয়ার্ক একত্রিত হয়ে একটি বিশাল সংযুক্ত জাল তৈরি করেছে। এসব নেটওয়ার্ক গঠিত হয় ব্যবসা, সরকার, স্কুল এবং ব্যক্তিগত ডিভাইসের সংযোগে, যা একত্রিত হয়ে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট তৈরি করে।

 

 ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে?

ইন্টারনেটের কাজ বোঝার জন্য এর কাজের পদ্ধতিকে কয়েকটি ধাপে বিভক্ত করে দেখানো যেতে পারে:
 

 ১. অনুরোধ পাঠানো
যখন আপনি আপনার ব্রাউজারে কোনো ওয়েবসাইটের URL টাইপ করেন বা একটি লিংকে ক্লিক করেন, তখন আপনি মূলত একটি তথ্যের অনুরোধ পাঠাচ্ছেন। এই অনুরোধটি HTTP অনুরোধ নামে পরিচিত এবং এটি আপনার ডিভাইস থেকে সেই সার্ভারে পাঠানো হয়, যেখানে ওয়েবসাইটটি হোস্ট করা থাকে। তবে এর আগে, একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ রয়েছে: আপনার ডিভাইসকে ওয়েবসাইটটির IP ঠিকানা খুঁজে বের করতে হয়।
 

 ২. DNS: ইন্টারনেটের ফোনবুক

ইন্টারনেটে সংযুক্ত প্রতিটি ডিভাইসের একটি স্বতন্ত্র পরিচয় থাকে, যাকে IP ঠিকানা বলা হয়। ঠিক যেমন প্রতিটি বাড়ির একটি নির্দিষ্ট ঠিকানা থাকে, তেমনই প্রতিটি ডিভাইস বা ওয়েবসাইটের একটি নির্দিষ্ট IP ঠিকানা থাকে, যা তথ্য আদান-প্রদান সহজ করে তোলে।

তবে, সংখ্যা দিয়ে তৈরি এই IP ঠিকানাগুলি মনে রাখা বেশ কঠিন। এজন্য ইন্টারনেট ডোমেইন নেম সিস্টেম (DNS) ব্যবহার করে, যা ওয়েবসাইটের নামকে IP ঠিকানায় রূপান্তর করে। DNS এক ধরনের ইন্টারনেটের ফোনবুক হিসেবে কাজ করে, যা আমাদের সহজে ডোমেইন নাম দিয়ে সাইট খুঁজতে সাহায্য করে।
 

 ৩. নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেটা প্রেরণ
একবার আপনার অনুরোধ প্রক্রিয়াকরণ হয়ে গেলে এবং DNS সঠিক IP ঠিকানা খুঁজে পেলে, আপনার অনুরোধটি ছোট ছোট প্যাকেট আকারে ভেঙে যায় এবং এগুলি রাউটার ও সুইচের মাধ্যমে সার্ভারের দিকে প্রেরণ করা হয়।

এই প্যাকেটগুলো ভিন্ন ভিন্ন পথ ধরে সার্ভারে পৌঁছায়। এই প্রক্রিয়াটিকে প্যাকেট সুইচিং বলা হয়, যা ইন্টারনেটকে দ্রুত ও কার্যকরী করে তোলে।
 

৪. সার্ভারে পৌঁছানো
এই ডেটা প্যাকেটগুলি অবশেষে ওয়েব সার্ভারে পৌঁছে যায়, যা একটি বিশেষ ধরনের কম্পিউটার, যেখানে ওয়েবসাইটের ফাইল ও তথ্য সংরক্ষিত থাকে। সার্ভার আপনার অনুরোধটি প্রক্রিয়াকরণ করে এবং প্রয়োজনীয় ডেটা (যেমন HTML ফাইল, ছবি এবং অন্যান্য মিডিয়া) আপনার ডিভাইসে ফেরত পাঠায়।
 আবারও, ডেটা প্যাকেট আকারে প্রেরিত হয়, যা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আপনার কম্পিউটারে ফিরে আসে।
 

৫. ডেটা পুনরায় গঠন করা
একবার আপনার ডিভাইসে ডেটা প্যাকেটগুলো পৌঁছালে, এটি প্যাকেটগুলোকে পুনরায় গঠন করে। এরপর, আপনি ওয়েবসাইটটি আপনার স্ক্রিনে দেখতে পান। আপনার ব্রাউজার ডেটাগুলিকে ব্যাখ্যা করে এবং আপনাকে একটি পড়ার মতো ফরম্যাটে প্রদর্শন করে।
 

৬. সংযোগ বজায় রাখা
এই পুরো প্রক্রিয়ার সময়, আপনার ডিভাইস এবং সার্ভার ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রোটোকল/ইন্টারনেট প্রোটোকল (TCP/IP) ব্যবহার করে একটি সংযোগ বজায় রাখে। এই প্রোটোকল নিশ্চিত করে যে সব ডেটা প্যাকেট সঠিক ক্রমে আসে এবং কোনো তথ্য হারিয়ে না যায়।


ইন্টারনেটের মূল প্রযুক্তি

ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে তা বুঝতে, এটি পরিচালনায় ব্যবহৃত কিছু প্রযুক্তি জেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ:

- IP ঠিকানা: ইন্টারনেটে সংযুক্ত প্রতিটি ডিভাইসের একটি IP ঠিকানা থাকে, যা এটি চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
  

রাউটার: রাউটার হলো ডিভাইস যা ডেটা প্যাকেটগুলোকে বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্যে পরিচালনা করে। এটি তথ্যকে সঠিক পথ ধরে গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
 

সার্ভার: সার্ভার হলো শক্তিশালী কম্পিউটার যা ওয়েবসাইটের ফাইল সংরক্ষণ করে। আপনি যখন একটি ওয়েবসাইট অনুরোধ করেন, তখন সার্ভার থেকে তথ্য নিয়ে আপনার ডিভাইসে পাঠানো হয়।
 

প্রোটোকল: ইন্টারনেটে যোগাযোগের জন্য HTTP এবং TCP/IP এর মতো প্রোটোকলগুলো প্রয়োজনীয়। এগুলি সেই নিয়ম ও মান নির্ধারণ করে, যার মাধ্যমে ডিভাইসগুলো তথ্য আদান-প্রদান করে।
 ইন্টারনেট সেবাদাতা (ISP) এর ভূমিকা

আমরা ইন্টারনেটের সংযোগ পেতে ইন্টারনেট সেবাদাতা (ISP) এর উপর নির্ভর করি। ISP যেমন: বিটিসিএল, গ্রামীণফোন বা স্থানীয় সংস্থাগুলি, আমাদের বাড়ি বা অফিসকে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত করে। তারা তার, ফাইবার অপটিক বা ওয়্যারলেস সংযোগের মাধ্যমে আমাদের ডিভাইসে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে।
 

 ইন্টারনেটের নিরাপত্তা


ইন্টারনেট হলো একটি উন্মুক্ত নেটওয়ার্ক, যেখানে তথ্য আদান-প্রদান ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এজন্য **এনক্রিপশন** গুরুত্বপূর্ণ। এনক্রিপশন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে তথ্যকে কোডে রূপান্তর করা হয়, যাতে শুধুমাত্র নির্ধারিত প্রাপক তা পড়তে পারে। যেসব ওয়েবসাইট "https" ব্যবহার করে, তারা তথ্য নিরাপদ রাখতে এনক্রিপশন ব্যবহার করে।

 একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক

ইন্টারনেট আধুনিক প্রযুক্তির একটি চমৎকার উদাহরণ, যা লক্ষ কোটি মানুষের জন্য যোগাযোগ, তথ্য শেয়ার এবং জ্ঞান অর্জনের সুযোগ করে দেয়। যদিও এটি দেখতে জটিল মনে হতে পারে, মূলত এটি অনুরোধ পাঠানো, ডেটা প্রেরণ এবং তথ্য পুনরুদ্ধার করার সহজ প্রক্রিয়া। এবার থেকে যখনই আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন, আপনি এই প্রক্রিয়ার পেছনের প্রযুক্তির জ্ঞান নিয়ে গর্বিত হতে পারেন।



Post a Comment

Previous Post Next Post